150 Years of Dooars Tea : স্বাদে গন্ধে রূপে গুনে

আমরা কি চা খাব না? কোভিড এর সময় এই কথাটি খুব ভাইরাল হয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এক কাপ চায়ের জন্য মন আনচান করে। হাতে একটু সময় থাকলে ঠেকে বসে চা বা চায়ের দোকানে আড্ডা সব সময় জমে যায়। আর এটাই বাঙালির ঐতিহ্য।



তিন হাজার বছর আগের থেকে চায়না প্রদেশে চা কে ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ভারতে ১৮৫০ সালে দার্জিলিং পাহাড়ে চা চাষের পথ চলা শুরু হয়। আর আজ থেকে দেড়শ বছর আগে থেকে অর্থাৎ ১৮৭৪ সালে ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় প্রথম চা বাগান গড়ে ওঠে। এর পরবর্তী বছর গুলিতে জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি, বাগ্রাকোট, ডালিমকোটে ডুয়ার্সের যথাক্রমে দ্বিতীয় তৃতীয় চা বাগান শুরু হয়। দেশের মোট চা উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ চা উৎপাদন হয় ডুয়ার্সে।


 ডুয়ার্স এর সব থেকে পুরনো চা বাগান :

বাগড়াকোট (মালবাজার), ওয়াশাবাড়ি (মালবাজার), কুমলাই (মালবাজার), বামনডাঙ্গা (নাগরাকাটা)


 ডুয়ার্সের সব থেকে বড় চা বাগান :

 চ্যাংমারি ১৮৫১ হেক্টর 

 আইভিল ১৬২৫ সেক্টর 

 হান্টাপাড়া ১২৩০ হেক্টর 

 সাতালি ১০৯৪ হেক্টর 

 লিসরিভার ১০২৯ হেক্টর


সেরা চা বাগানের ঠিকানা :

উত্তরবঙ্গ ডুয়ার্সের সেরা চা বাগান গুলোর মধ্যে গুডরিকের নাম দেশের সেরা চা বাগানগুলির মধ্যে যেতে পারে। এছাড়াও রয়েছে কুর্তি ও দলগাঁওয়ের চা বাগান। গুডরিকের সঙ্গে গোপালপুর ও গুলমা এখন দেশের টপ চা বাগান গুলোর মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। গুডরিকের পাশাপাশি নাম নেয়া যায় রাইডাক ও কার্তিকা এই বাগানগুলির। 


 ডুয়ার্স চা বাগানের ইতিহাস :

১৮৭৬ সালের মধ্যে ডুয়ার্সে মোট ১৩ টি বড় চা বাগান স্থাপিত হয়। ১৮৭৯ সালে জেলায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলি হয়ে আসেন ভগবান চন্দ্র বসু যিনি ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু পিতা। তার সহযোগিতায় ভারতীয়দের চা বাগান তৈরি করার কাজ সহজতর হয়ে ওঠে। 


ইউরোপীয় সাহেব দের সাথে পাল্লা দিয়ে বাঙালি ব্যবসায়ীদের এই শিল্পে প্রবেশ করা মোটের উপর মসৃণ ছিল না। এক বাগান থেকে আরেক বাগান যাতায়াত করা, রেলপথ ব্যবহার করা, সড়ক পথ ব্যবহার করা বা ব্যাংকের ঋণ না দেয়ার মত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হতো। 


 ১৯৪৫ সালে কোচবিহার বড় শোলমারি গ্রামে প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৭ সালে ডুয়ার্সে মোট ১৮০ টি চা বাগান গড়ে উঠেছিল, যেখানে ১৮৭৬ সালে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩। 


ডুয়ার্স এর অন্যান্য নামকরা চা বাগানগুলি :

সরস্বতী পুর চা বাগান - ১৯১৭ সাল 

জয়পুর, করলাভ্যালি, ভান্ডিগুড়ি - ১৯১৮ সাল 


এর পরবর্তী সময়ে যে বাগান গুলি গড়ে উঠেছে সেগুলি যথাক্রমে গোপালপুর, ধাওলাঝরা, নিমতিঝরা, কোহিনুর, তুরতুড়ি, মথুরা, মাঝের ডাবরী, পাটকাপাড়া, সুহাসিনী ইত্যাদি। এ ছাড়া যে চা বাগান গুলি রয়েছে সে গুলি হল রানীচেরা, সাইলি, নয়াসাইলি, ডামডিম, সাঁতালি, বড়দিঘি ইত্যাদি।


ডানকান্সের চা বিভাগের ডুয়ার্সে নয়টি চা বাগান রয়েছে – বীরপাড়া , হান্তাপাড়া, দুমচিপাড়া, লঙ্কাপাড়া, তুলসিপাড়া, গারগান্ডা, কিলোট, নাগাইসুরি ও বাগরাকোট। 



ডুয়ার্সে গুডরিকের চা বাগানগুলি হল: ডাঙ্গুয়াঝাড় , লেশ নদী , মীংলাস , হোপ , আইবেল , চুলসা , চলউনি , জিতি , সাঁকোস , গন্দ্রপাড়া , লাখীপাড়া এবং কুমারগ্রাম।


ডুয়ার্স অঞ্চলের কল্যাণী গোষ্ঠীর অন্যান্য চা বাগানগুলি হল সরস্বতীপুর চা বাগান এবং চৌলবাড়ি চা বাগান।


পালচৌধুরী পরিবার মহুরগং ও গুলমা টি এস্টেট এবং ওয়াশরাবাড়ি টি এস্টেটের মালিক। ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যান্ড্রু ইউল অ্যান্ড কোং লিমিটেডের কারবালা, বানারহাট, চুনাভুট্টি এবং নিউ ডোয়ার্সে ডুয়ার্সে চা বাগান রয়েছে।


বন্ধ চা বাগান: 

বন্ধ চা বাগানগুলোর মধ্যে রয়েছে: কাঁঠালগুড়ি, রামঝোরা, রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর, চামুর্চি, রায়পুর, বামনডাঙ্গা-তন্ডু, সামসিং , চিনচুলা, শিকারপুর-ভান্ডারপুর, ভরনোবাড়ি, মালনাডি, কালচিনি ও রায়মাতাং এবং ঢেকলাপাড়া । 


প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ভারত সরকারের একটি অফিসিয়াল রিলিজ নিম্নলিখিত বাগানগুলিকে বন্ধ ঘোষণা করেছে: মধু চা বাগান , ঢেকলাপাড়া , বুন্দাপানি , ধরনিপুর, রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর, পানিঘাটা এবং মানাবাড়ি। 


বিশাল কর্মযজ্ঞ ও কর্মসংস্থান :

স্থায়ী অস্থায়ী মিলে মোট ১০ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। 


১০ টি টপ চা বাগান :

বর্তমানে চা এর গুণমান দামের তারতম্য এর উপর বিচার করে সেরা ১০ টি বাগান বেছে নেয়া হয়েছে, যাদের অবস্থান সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে। 

১০. গাঠিয়া রয়েল 

০৯. বিন্নাগুঁড়ি টি এস্টাট 

০৮. লিস রিভার 

০৭. সংকোশ 

০৬. কুমারগ্রাম 

০৫. হোপ টি গার্ডেন 

০৪. গুলমা 

০৩. কার্তিকা 

০২. জিতি টি গার্ডেন 

০১. চালসা টি গার্ডেন।


ডুয়ার্স চা এর কিছুতে কদর কমে যাওয়ার কারন :


- চা এর অত্যধিক দাম বেড়ে যাওয়া।

- অসমের সাথে নেপাল ও দক্ষিণ ভারতের চায়ের সাথে লড়াই।

- বড় চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়া, অনেক চা বাগান ধুকতে থাকা।

- বাগানে শ্রমিক নিয়ে সমস্যা।

- ছোট মালিকানাধিন চা বাগান বেশি করে গড়ে ওঠা।

- বাগানগুলি চা এর গুণমান ঠিক না রাখা।

- বড় চা বাগানগুলি আর্থিক ভাবে লাভ জনক না হওয়া।

- আবহাওয়ার তারতম্য ঘটা ও গুণগত উৎপাদন না হওয়া।


ক্ষুদ্র চা চাষ : 

ডুয়ার্স এর কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় ১৯৯৮ সাল থেকে ক্ষুদ্র চা চাষের প্রসার ঘটে। ডুয়ার্স অঞ্চলে ক্ষুদ্র চা বাগানের সংখ্যা ২৮ হাজার যার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলায় ২৫ হাজার। 


তথ্য সূত্র : উত্তবঙ্গ সংবাদ, উইকিপেডিয়া,

Post a Comment

Previous Post Next Post