শীতকাল মানেই ফুলের সময়। চোখ জুড়োনো রঙ বেরঙের চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ থেকে গাঁদা ছাদ বাগান, ব্যালকনি ভরিয়ে দিতে কোনও তুলনা নেই কারও। অনেকেই বাগান করছেন, বাগানে সময় দিচ্ছেন, গাছ পাতা ফুল ফলে বাগান, বাড়ী, ছাদ, ব্যালকনি ভরিয়ে দিচ্ছেন।
Meta AI Generated Picture.
আপনার হাতে সময় নেই বা কিছু সময় হাতে থাকলেও জিনিস পত্র আনা নেয়া করার সময় নেই, কিন্তু আপনার শখ ষোলো আনা। হ্যাঁ আপনি ঠিক আর্টিকেল পড়ছেন। এখন অনলাইন এর যুগ, হাতের কাছে চায় কি নাই? সব পাওয়া যায়। একে একে জেনে নেয়া যাক কি কি প্রয়োজন হতে পারে।
১. গাছ লাগানোর জন্য কিছু টব
২. মাটি
৩. গাছের বিচ বা গাছের চারা
৪. সার (প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সার )
৫. প্রতিদিন দিতে হবে পরিমান মতো জল।
নিচের দেয়া লিংক গুলো ক্লিক করতে থাকুন, খুব কম টাকায় সামান্য বাজেটের মধ্যে বাগান তৈরির সব রকমারি হাতের কাছে হাজির হবে।
টব (দাম ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা ৪ পিস )
মাটি (দাম ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা ৫ কেজি )
ফুল গাছের বিচ (দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা )
গাছের চারা (দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা )
জৈব সার (দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ৫ কেজি)
তাই সময় নষ্ট না করে সপ্তাহে এক থেকে দু দিন সময় দিয়ে ছোট করে শুরু করতে পারেন। চারটি টবের গাছের জন্য ১১০০ থেকে ১৭০০ টাকা খরচ হতে পারে। অল্প অল্প করে চারা তৈরি করতে করতে একটা ভালো নেশা চলে আসবে এবং আপনার বারান্দা ও ছাদ বাগান কে ফুলে ফুলে ভরিয়ে তুলবে।
যদি বাগান করার নেশা ধরে যায় তবে এর মত আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। তবে গাছ বাঁচানোর জন্য কিনে নিতে হবে গাছ পরিচর্যা করার যে কোন ভালো বই যা আপনি অনলাইন থেকে পেয়ে যাবেন। নিচে কিছু লিংক শেয়ার করা হলো, যেখান থেকে আপনি অনলাইন বই অর্ডার করে আনতে পারবেন।
উজানিয়া উৎসব ২০২৪ : রাজবংশী লোক সংস্কৃতি
যদি বাড়িতে গাছ লাগাতে সারের জন্য খরচ করতে না চান - পদ্ধতি ১
বাড়ির বাগানের পেছনে প্রচুর খরচ করা সম্ভব নয়। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েই বাগানকে সুন্দর করা সম্ভব।
যদি একটু বুদ্ধি দিয়ে দু-একটা ছোট্ট কাজ করে ফেলেন তাহলে কিন্তু এক পয়সাও খরচ না করে ফুলে ফলে ভরিয়ে তুলতে পারবেন আপনার ছাদ বাগানটি। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার রাসায়নিক নয়, আপনি চাইলে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সার বানিয়ে নিতে পারেন বাড়িতেই। তাও আবার রান্নাঘরের জিনিস দিয়েই। জানুন উপায়-
শুধুমাত্র রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া সবজির খোসা দিয়েই সম্ভব সেই ছোট্ট কাজটি। শীত আসা মানেই বাজারে হাজারও সবজি। আর এই সবজির খোসা ফেলে দেবেন না ভুলেও, বরং এইগুলো কোনো ড্রামে জমিয়ে বাড়িতেই আপনি বিনা খরচে বানিয়ে নিতে পারবেন গাছের জন্য জৈব সার।
পেঁয়াজ আর রসুনের খোসাভুলেও ফেলে দেবেন না। এগুলি দিয়েও চমৎকার সার তৈরি করে নিতে পারবেন। পেঁয়াজ-রসুনের খোসা ১ মুঠোর মতো জমা করতে থাকুন। এবার ৪-৫ দিনের জন্য এগুলিকে এক লিটার জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই জল ছেঁকে নিয়ে আরও ১ লিটার জল মিশিয়ে পাতলা করে নিন। তারপর প্রতিটা গাছে ১ কাপ করে দিয়ে দিন।
আলুও কাজে আসে প্রতিদিনের রান্নায়, খোসাও জমে প্রচুর। আলুর খোসায় পাওয়া যায় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস আর অনেক ধরনের ভিটামিন। ১ মুঠো আলুর খোসা নিয়ে ১ লিটার জলে ভিজিয়ে রাখুন। একটি বোতলের মুখ বন্ধ করে রেখে দিন ৩-৪ দিন। প্রতিদিন একবার একটা চামচ দিয়ে নেড়ে দেবেন। এরপর পাঁচ দিনের দিন ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। খোসা ভেজানো জলের সঙ্গে সম পরিমাণে কলের জল মেশান। এবার তা গাছে দিন।
আরও একটি সহজ উপায় ৫০০ লিটারের একটি বোতল মাঝখান থেকে কেটে নিন। ঢাকনার চারপাশের ১ ইঞ্চি মতো জায়গায় ফুটো করে নিন অনেকগুলি। এবার সেই বোতলে সবজির খোসা যোগ করুন। ওপর থেকে অল্প মাটির লেয়ার দিয়ে দিন। সামান্য জল দিয়ে ভিজিয়ে দেবেন খোসা আর মাটি। তারপর কাগজ দিয়ে উপরের অংশটা বন্ধ করে দিন। এবার বোতলের মুখের দিকটা এমনভাবে টবের পাশ দিয়ে পুঁতে দেবেন যাতে ফুটোর জায়গাগুলো মাটির ভিতরে থাকে। দেখবেন সবজির খোসা পচে নিজে নিজেই গাছকে খাবার দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে বোতলে নতুন করে সবজির খোসা ভরে নিতে ভুলবেন না যেন।
কলার খোসা পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ। কলার খোসা রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। এবার সেই গুঁড়ো ১ চা চামচ করে প্রতি ১৫ দিন অন্তর দিতে পারেন ফল বা সবজির গাছে। অথবা চাইলে কলার খোসা কেটে কুচি কুচি করে গাছের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তাতে দিয়ে দিতে পারেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই তা ডি কমপোস্ট হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। অথবা ১ বোতল জলে ২-৩টি কলার খোসা ৪-৫দিন ভিজিয়ে রাখুন। এবার এই জল যোগ করুন গাছের মাটিতে।
শীতের ফুল আর ফল গাছের জন্য এমন যে কোনও জিনিসই কিন্তু হতে পারে দুর্দান্ত কার্যকরী। সবজির খোসায় থাকা খনিজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় গুণগুলি মাটিতে গেলেই গাছের বৃদ্ধি হবে হুড়মুড়িয়ে। আর ফুলে-ফলে ঘেরা গাছ মন ভরিয়ে দেবে শীতের রোদ্দুরে। আর সবথেকে মজার বিষয় এক পয়সাও খরচ হবে না এই কাজে।
যদি বাড়িতে গাছ লাগাতে সারের জন্য খরচ করতে না চান - পদ্ধতি ২
নিজের তৈরি বাগানের গাছ হবে সুন্দর এমন ইচ্ছে সকলেরই থাকে। তবে সব সময় বাগানের পেছনে প্রচুর খরচ করা সম্ভব নয়। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েই বাগানকে সুন্দর করা সম্ভব।
বাড়িতে ব্যবহৃত ফল, সবজির খোসা বা শাক কেটে নিয়ে গোড়ার অংশটি ফেলে দেন? এবার সেটা দিয়েই আপনার বাগান হয়ে উঠবে দারুণ সুন্দর।
বাড়িতে ব্যবহৃত আরও বেশকিছু জিনিস রয়েছে যা দিতে পারবেন বাগানের গাছের পরিচর্যা। নিতে পারবেন গাছের যত্ন। ঘরোয়া এই জিনিস গুলি দিয়েই বাগান হয়ে উঠবে সুন্দর।
বাগানে একটি অংশে কলার খোসা বা মজে যাওয়া কলা জমিয়ে রাখুন। তারপর ওপর দিয়ে সামান্য করে মাটি দিয়ে দিন। কিছুদিন পর সেই মাটি গাছের গোড়ায় দিয়ে দিন। এতে ভাল সারের কাজ করবে এই মাটি।
বাড়িতে রান্না করা শাকের গোড়ার দিকটি ফেলে না দিয়ে এটিকেও কলার খোসার মতো করেই কোথাও রেখে দিন। এরপর সেই মাটি অন্যান্য গাছে ছড়িয়ে দিন। এতেও উপকার হবে।
ডিম খাওয়ায় পর ডিমের খোসা ফেলে দেন কম বেশি সকলেই। তবেই ডিমের খোসা ফেলে দেবেন না। শুঁকিয়ে গুঁড়ো তৈরি করে বাগানে জমিয়ে রাখুন। সামান্য করে গাছের গোড়ায় দিন।
সকলের বাড়িতেই চা তৈরি হয়। বাড়িতে চা বানানোর পর সেই পাতা ব্যবহার করতে পারেন গাছের পরিচর্যা করতে। চা পাতা রোদে রেখে শুকিয়ে গুঁড়ো করে গাছের গোড়ার মাটিতে দিন।
যখন রঙবেরঙের ফুল আর সবুজের ছোয়া আপনাকে মন ভরিয়ে দেবে- পদ্ধতি ৩
বাড়ির মধ্যে সবুজের ছোঁয়া পছন্দ অনেকের। একটা ছোট্ট বাগান কে না চায়? কিন্ত জায়গার অভাবে সেই ইচ্ছা পূরণ করা দুস্কর ব্যাপার হয়ে ওঠে। তবে কথায় বলে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। যাঁরা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন অথবা নিজের বাড়িতে জায়গার অভাব তাঁরা বাগান করতে বেছে নিতে পারেন বাড়ির ছাদকে বা ব্যালকনি কে।
ছোট ছোট টবে প্রসেসড মাটি (অনলাইন থেকে পাওয়া যাচ্ছে) ফেলে সেখানেই নানান ফুল-ফলের গাছ, শাক-সবজি এ সব লাগিয়ে ছোট্ট এক টুকরো বাগান করে নিতে পারেন। শহর জুড়ে এখন ছাদে বাগান করার প্রবণতা চোখে পড়ছে।
ছাদের মধ্যে অনেক ধরনের বাগান করা যায়। ছোটখাটো ফুল কিংবা ফলের গাছ ছোট টবেই লাগানো যায়, কিন্তু একটু বড় ধরনের গাছের ক্ষেত্রে ছোট টবে সমস্যা হয়, কারণ গাছ খুব একটা বাড়ে না। তাই সিমেন্টের বড় টব কিনে বা বানিয়ে নিতে পারেন। বড় প্লাস্টিকের ড্রামেও গাছ লাগানো যায় ।
তবে করব বললেই তো হল না। ছাদে ছোট্ট একটা বাগান বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ালেও বাগান করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। বেশ কিছু নিয়ম আছে যা না মানলে কিন্তু গাছ বাঁচানো খুব শক্ত। এর জন্য কিছু বই পত্র পরে নিতে পারেন যা অনলাইন থেকে সহজেই জোগাড় করা যাবে।
যেখানেই গাছ লাগান না কেন, সেগুলোর মধ্যে একেবারে নীচে কয়েকটা ছিদ্র করে নিতে হবে। যাতে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যেতে পারে। কিছু পাথরের টুকরো টবের একেবারে নীচে দিতে হবে। তার পর এক ধাপ মাটি। মাটির উপরে সার। জৈব সার হলেই সবচেয়ে ভাল (Vermicompost) অনলাইন থেকে পেয়ে যাবেন। তার পর আবার মাটি। এ ভাবেই টব প্রস্তুত করে নিতে হবে।
ছাদের উপরে ছোট পিলার করে মেঝে ঢালাই করে গাছ লাগানোর জায়গা করে নিতে পারেন। চার পাশে পাঁচিল দিয়ে তার মধ্যে সার মেশানো মাটি ফেলুন। সেই মাটির মধ্যে কোরিয়ান ঘাস বিছিয়ে দিন কার্পেটের মতো করে। নিয়মিত জল দিলে আর যত্নে করলে খুব সুন্দর হয়ে উঠবে এই ছাদের বাগান।
ছাদে বড় গাছের বনসাই, কলমের ফল বা ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। চাইলে কিন্তু কলা, আম, বা নারকেল গাছও ছাদের টবে লাগাতে পারেন।প্রখর রোদে নরম প্রকৃতির গাছ না লাগানোই ভাল।
নানা বড় বড় টবে গাছ থাকলে তার মাঝে ছোট ছোট গার্ডেন চেয়ার রাখতে পারেন,আবার ঘাসের কার্পেটের উপরেও আরাম করে বসতে পারেন। ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে আলো লাগিয়ে নিন। ব্যস তাহলেই কিন্তু বেশ লাগবে আপনার রুফ টপ গার্ডেন।